নিজস্ব প্রতিবেদক : মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা তানেস উদ্দিন আহমেদ এর ইন্তেকালে গজারিয়া উপজেলাসহ মুন্সীগঞ্জের সর্বত্র নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মহান এ বীরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, গজারিয়া প্রেসক্লাব, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষ।
গত শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তার যেমন অসীম অবদান রয়েছে, তেমনি এলাকার উন্নয়নে সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডেও ছিল তার অসামান্য অবদান।
একজন সজ্জন ব্যক্তিত্ব, বীর মুক্তিযোদ্ধা তানেস উদ্দিনকে নিয়ে একাধিক টিভি, জাতীয় পত্রিকা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ফুফাতো বোন জোহরার সঙ্গে ছিল তার প্রেম। প্রেমের জ্বালায় জোহরার সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রায়ই সন্ধ্যায় তানেসকে মেঘনা নদী পার হতে হতো নৌকায় করে। দেখা করে আবার নৌকায়ই ফিরতেন তিনি। একদিন তাদের সন্ধ্যায় দেখা হওয়ার কথা। আগে থেকেই জোহরাকে খবর দেওয়া হয়ে গেছে। সন্ধ্যায় মেঘনা নদীর ওপারে জোহরা অপেক্ষা করছিলেন। এদিকে পারাপারের জন্যও নেই কোনো নৌকা। কীভাবে ওপারে যাবেন তানেস? উপায় না পেয়ে সাঁতরে মেঘনা পার হয়েছিলেন তিনি। ওপারে উঠে জোহরার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেই রাতে উত্তাল জোয়ারের মধ্যে উন্মত্তের মতো ছুটে গিয়েছিলেন বলে জোহরার বকাও খেয়েছেন। তাতে কী, সম্পর্কের গভীরতাটুকু দু’জন ঠিকই বুঝেছিলেন। ১৯৬৭ সালে শয্যাশায়ী বাবার পাশে বসে জোহরা কথা দিয়েছিলেন, কোনোদিন ছেড়ে যাবেন না। এরপর ঘনিয়ে এলো মুক্তিযুদ্ধের বছর, ১৯৭১। চারদিকে যুদ্ধের ডাক। সেই ডাকে সাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তানেস। এ কথা শুনে কেঁদে বুক ভাসিয়েছিলেন জোহরা। প্রথমে আপত্তি করেছিলেন, কিন্তু পরে সম্মতি দিলেন ঠিকই। জোহরাকে রেখে যুদ্ধে গেলেন তানেস। কলকাতা-আগরতলায় থেকে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফেরেন তিনি। যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এরই মধ্যে একদিন খবর এলো, জোহরা আর তার বাবাকে দুষ্কৃতিকারীরা গুলি করে হত্যা করেছে। যুদ্ধ শেষে বিজয়ী হয়ে তানেস গ্রামে ফিরে আসেন। জোহরার স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকতে শুরু করেন। গত ৫৪ বছর যাবৎ এই মানুষটার স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচেছিলেন তিনি। গজারিয়াবাসীর কাছে সুপরিচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা তানেস উদ্দিন এর মৃত্যুতে শোকাহত পুরো উপজেলা।
গত শুক্রবার বাদ আছর উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের ইসমানিরচর গ্রামে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোহিনুর আক্তার, পরে বাদ মাগরিব জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোহিনুর আক্তার বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা তানেস উদ্দিন আহমেদ অত্যন্ত ভালো মনের একজন মানুষ ছিলেন। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস।