রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে ছয়আনীপাড়া শাহ বদর মসজিদ অন্যতম। মসজিদটি শাহজাদপুর থানা ও ভূমি অফিসের পূর্ব পাশে অবস্থিত। স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে মসজিদটির রয়েছে ভিন্নমাত্রার গৌরব। মসজিদটি হিজরি ১১০১ সালে নির্মাণ শুরু হয়ে ইসলাম প্রচারক শাহ বদর (রহ.) প্রচেষ্টায় ১১৫১ হিজরি সালে শেষ হয়। মসজিদটির বাইরের দিক থেকে দৈর্ঘ্য ৯.০৭ মিটার এবং প্রস্থ ৬.০৭ মিটার। অভ্যন্তরীণ দৈর্ঘ্য ৭.০৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩.৫৫ মিটার। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ৫.৮৯ মিটার। পশ্চিম বাংলা এবং বাংলাদেশের কোথাও বদর উদ্দিনের মসজিদের মতো দুই গম্বুজের মসজিদ চোখে পড়ে না। তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদার দুই গম্বুজবিশিষ্ট (১৫৯৫-৯৬ সনের) মসজিদের তুলনা করা যায়। তবে ওই মসজিদের চেয়ে শাহ বদর মসজিদ ভিন্নতর। কারণ মালদার মসজিদে তিন ‘বে’ যা বদর মসজিদে নেই। মসজিদের সামনের ফাসাদে ৩টি দরজার সোজাসুজি ৩টি মেহরাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় মেহরাবের পেছনের কেবলা বাইরের দেয়ালের সোজাসুজি সম্প্রসারিত রয়েছে। মসজিদের পূর্ব ফাসাদে ৩টি খিলান বিশিষ্ট প্রবেশপথ এবং পূর্ব দেয়ালে ৩টি মেহরাব আছে। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে জালি নক্সা সংবলিত গবাক্ষ আছে। অন্যান্য মসজিদ থেকে এ মসজিদের জুলস্না সমানভাবে দুইভাগে বিভক্ত, কিন্তু এখানে মেহরাব ৩ ভাগে বিভক্ত। দুটি গম্বুজ কলসচুঁড়া যুক্ত এবং শীর্ষদেশ পদ্মফুলের শয্যায় অলঙ্কৃত। পুরো মসজিদ জুড়েই চর্তুকেন্দ্রিক খিলানরীতি অনুসৃত রয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরে কোনো স্তম্ভ নেই। মসজিদটি ছোঁ ছোঁ চুন-সুরকি দ্বারা নির্মিত। এ মসজিদটির শিলালিপি অন্যান্য শিলালিপির মতো ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ দিয়ে শুরু না করে ‘কালিমা তাইয়্যেবা’ দিয়ে ব্যতিক্রমভাবে শুরু করা হয়েছে। এই শিলালিপির ভাষা ফারসি।
মসজিদটির নির্মাতা শাহ বদর (রহ.) একজন ধার্মিক ইমানদার মুসলমান ছিলেন। তিনি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরবের ইয়েমেন থেকে আসা অন্য মুসল্লিগণের একজন ছিলেন। শিলালিপির বাম দিকের উপরের অংশে চার খলিফার নাম এবং তৈরির সময় এ অঞ্চলের শাসকের নাম মোহাম্মদ শাহ উৎকীর্ণ হয়েছে। এ শিলালিপিটি সাধারণ কোনো শিলা খন্ড নয় বরং এটা বিরল টেরাকোটা ফলকলিপি। মসজিদটির প্রায় ১ কিলোমিটার পূর্বে করতোয়া নদীর তীরে দরগাহপাড়ায় মখদুমিয়া জামে মসজিদটির ২য় মসজিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে মসজিদটি আরেক ইসলাম প্রচারক হযরত মখদুম শাহদ্দৌলা ইয়েমেনি (রহ.) প্রতিষ্ঠা করেন (১২৯২-৯৬) খ্রিষ্টাব্দে। সামগ্রিক পর্যালোচনায় বাংলার মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের যুগে দুই গম্বুজবিশিষ্ট বিরল টেরাকোটা শিলালিপির একটি ব্যতিক্রমী স্থাপত্যশৈলীর অনুপম নিদর্শন বদর মসজিদ।