চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : পটিয়ার দুঃখ পাহাড়ি শ্রীমতি খালকে ঘিরে সরকারের মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলায় বাড়ছে খালের দুই তীরের লক্ষ মানুষের স্বপ্ন। পটিয়া উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প এবং শ্রীমতি খালে মাল্টিপারপাস হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মানের দুটি মেগা প্রকল্প দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলায় এই এলাকার হাজারো কৃষকের মুখে যেন বিজয়ের হাসি।
গত অর্থ বছর একনেকে এই প্রকল্পটি পাশ হবার পর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১,২৯১ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জামান এন্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, সেখানে শতাধিক শ্রমিক কাজ করছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইট ইঞ্জিনিয়ার জুনাইদ শ্রমিকদের সাথে থেকে তদারকি করছেন। আছেন পাউবির কর্মকর্তারাও। প্রকল্প দুটি আগামী ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হলে উপজেলার কৃষি, মৎস্য চাষ, যোগাযোগ ও ইকো ট্যুরিজম অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। সৃষ্টি হবে নতুন উদ্যোক্তা। ঘুচবে এলাকার বেকারত্ব। শীতকালে পানির অভাবে রবি চাষের যে ক্ষতি হতো তা কাটিয়ে উঠে জাতীয় পর্যায়েও এই এলাকার উৎপাদিত সবজি দেশের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছেন খালের পাড়ের কৃষক মোঃ আবদুল মালেক।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের আওতায় ৭টি ভাগে কাজ এগিয়ে চলেছে। হাইড্রোলিক ড্যাম নির্মাণ শেষ হলে শীতকালে পানি সংরক্ষণ করা যাবে এবং খালের দুই পাড়ে প্লেচিং ওয়াল নির্মাণের ফলে ভাঙন রোধ ও বন্যা থেকে এলাকাবাসীর বাড়িঘর, চাষাবাদের জমি এবং মাছের পুকুর রক্ষা পাবে। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণ, খালের দুই পাড়ে ফুট ওভার ব্রীজ নির্মাণ, সেচ অবকাঠামো, খাল পুনঃখনন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ, নদীতীর সংরক্ষণ, ফ্লাডওয়াল নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
তিনি জানান, হাইড্রোলিক ড্যাম নির্মাণে উজানে ৯শত ফুট এবং ভাটিতে ৮৫০ ফুট প্লেচিং ওয়ালের কাজ শেষ পর্যায়ে। ৩০ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২১টি সুইচ গেট নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ১২.৫০ কিলোমিটার। ফ্লাডওয়াল নির্মাণের ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে ভূমি মালিকানা জটিলতাসহ নানাবিধ কারণে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পটিয়া উপজেলার ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা এবং ৩৪ হাজার একর জমি লবণাক্ততার হাত থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসন ও ভাঙন রোধে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ উপকৃত হবেন। ড্যাম নির্মাণ শেষ হলে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষার পানি সংরক্ষণ করে ১,১০৮ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান। এছাড়া নদীতীর সংরক্ষণের মাধ্যমে ভাঙন রোধ করা যাবে। প্রকল্পটি ইকো-ট্যুরিজমের সুযোগ সৃষ্টি এবং মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ জানিয়েছেন, প্রকল্প দুটির কাজ আগামী ডিসেম্বরেই শেষ হওয়ার লক্ষ্যে দিনরাত কাজ চলছে। প্রতিদিন এই প্রকল্পে ১৫০ জন শ্রমিক কাজে নিয়োজিত রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলো জলাবদ্ধতা নিরসন, ভাঙন রোধ ও সেচ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে এলাকার মানুষের জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে।