প্রাইভেট হাসপাতালটিতে প্রতিদিনের বিল হতো প্রায় লাখ টাকা। পর্বতসমান সেই বিলের সামনে হাতের ১০ লাখ টাকা পুঁজি ফুরোতে সময় লাগেনি। কিন্তু স্ত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে। যে করেই হোক চিকিৎসার চালাতে হবে। আর সেজন্য টাকার জোগার করতে শেষ পর্যন্ত নিজের এমবিবিএস ডিগ্রি বন্ধক রাখছেন চিকিৎসক স্বামী।
মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে গোটা ভারত যখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত, তখন দেশটির রাজস্থানে কোভিড আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসায় এমনই বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন স্বামী। সম্প্রতি এ ঘটনা গণমাধ্যমের নজরে এসেছে।
৩২ বছর বয়সী ওই তরুণ চিকিৎসক স্বামীর নাম সুরেশ চৌধুরী। স্ত্রী অনিতা ও পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে পালি জেলার খেরওয়া এলাকায় থাকেন। গত বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন অনিতা। পরে নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা শনাক্ত হয়। শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য উপসর্গ বাড়তে থাকায় তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান সুরেশ। কিন্তু কোভিড রোগীদের চাপে শয্যা মেলেনি। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে জোধপুর এমসে ভর্তি করেন।
সুরেশ নিজেও পেশায় চিকিৎসক হওয়ায় মহামারিকালে স্ত্রীর দেখভালে জন্য টানা ছুটি নেওয়া তার পক্ষেও সম্ভব ছিল না। ফলে নিকটাত্মীয়ের ওপরে স্ত্রীর দেখাশোনার ভার দিয়ে নিজে রোজ হাসপাতালের ডিউটি করেছেন। দিন দিন অনিতার অবস্থার জটিলতর হতে থাকে। সুরেশ জানতে পারেন, অনিতার ফুসফুসের ৯৫ শতাংশ বিকল হয়ে গেছে। চিকিৎসকেরাও হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। তবে স্ত্রীকে সুস্থ করে তুলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সুরেশ উন্নত চিকিৎসার জন্য একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করেন। অনিতা তখন ভেন্টিলেশনে। শরীরের ওজন কমছিল দ্রুত। ফুসফুস-হৃদযন্ত্রও প্রায় বিকল।
ওই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা ছিল খুবই ব্যববহুল। প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ টাকার কাছাকাছি বিল হতো। তাতে সুরেশের কষ্টে জমানো ১০ লাখ টাকা ফুরোতে বেশিদিন লাগেনি। কিন্তু দিনের পর দিন স্ত্রীর চিকিৎসা চালিয়ে নিতে কোনো উপায়ান্তর না দেখে টাকা জোগাড় করতে নিজের এমবিবিএস ডিগ্রিটাই বন্ধক রাখার সিদ্ধান্ত নেন সুরেশ। বিনিময়ে পান ৭০ লাখ টাকা। এছাড়া কিছু জমি বিক্রি ও বন্ধুদের থেকেও ধারদেনা করেন।
তবে এই কষ্টের সাগর পেরিয়ে সুখের দেখা পেয়েছেন সুরেশ। হাসপাতালের বিল তো মিটিয়েছেনই, স্ত্রীকেও সুস্থ করে ফিরিয়ে এনেছেন ঘরে।