রোগ প্রতিরোধে ভিটামিন সি’র ম্যাজিক

লাইফস্টাইল ডেস্ক
মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক থাকলে বিভিন্ন রোগ ও সংক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম উৎস হলো ভিটামিন সি। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে করোনা আবহের কারণে বিশেষজ্ঞরা যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করছেন, সেহেতু ভিটামিন সি গ্রহণের গুরুত্ব আরো অনেক গুণ বেড়ে গেছে। শুধু সর্দি-কাশিই নয়, ভিটামিন সি মাংসপেশীর শক্তি বজায় রাখতেও দারুণভাবে সাহায্য করে। জেনে নিন রোজকার খাবারে ঠিক কোথা থেকে কতটা ভিটামিন সি পাবেন। ভিটামিন সি যেন কোনওমতেই খাবার থেকে বাদ না পড়ে, জেনে নিন রোজকার ডেইলি ডোজ।
ভিটামিন সি একেবারে চমৎকার জিনিস। ঠান্ডা লাগা আটকায় এই ভিটামিন এই কথা অনেকদিন ধরেই জানা। কিন্তু সম্প্রতি ভিটামিন সি-র আরও একটি গুণ যুক্ত হয়েছে। রিসার্চাররা জানিয়েছেন পেশী শক্তি বজায় রাখতে দারুণ ভালোভাবে কাজ করে এই ভিটামিন সি।
ভিটামিন সি শুধু যে ট্যাবলেট থেকেই পাওয়া যায় তাই নয়। দৈনিক আপনার চারপাশে যেসব খাবার পাওয়া যায় তার থেকেই ভিটামিন সি পাওয়া যায়। একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সারাদিনে ন্যূনতম ৬৫-৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন। এর পরিমাণ সর্বোচ্চ যেতে পারে ২০০০ মিলিগ্রাম অবধি। সারাদিনে ডাল, মাছ, সরবতে একটি পাতিলেবু চিপে খেলেই এই ন্যূনতম মাত্রা পেয়ে যেতে পারে মানুষ। তবে এর চেয়ে বেশি পরিমাণ ভিটামিন সি খাওয়া যেতেই পারে। যদি বেশি না পারেন তাহলে ক্ষতি নেই। কিন্তু রোজকার ন্যূনতম মাপটা খেতেই হবে।
যেকোনও অসুখ ঠেকাতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা চাই। অনেকেই কোভিড-যুদ্ধে ঢাল করছেন-লেবু, আমলকীর মত ফল। কিন্তু, ভিটামিন সি-কি করোনা ঠেকাতে পারে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন তথ্য এখনও মেলেনি। ভিটমিন সি কি করোনা ঠেকায়? করোনা থামবে কোথায় গিয়ে? জানা নেই। ভয়ের গুঁতোয়, ভিটামিনে ভরসা খুঁজছেন অনেকেই। বিশেষত, ভিটামিন সি। চীনা গবেষকদের একাংশের দাবি, করোনা মোকাবিলায় ভরসা ভিটামিন সি।
করোনা আক্রান্তের ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ায় ভিটামিন সি, করোনা ঠেকাতে নয়, চিকিৎসায় কাজ দিতে পারে ভিটামিন সি। ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন কমতে পারে ১৮%, সিসিইউ-তে থাকার প্রয়োজন কমতে পারে ৮%-‘চাইনিজ জার্নাল অফ ইফেকশাস ডিজিজ’-এর প্রবন্ধ সূত্রে জানা গেছে, করোনা চিকিৎসায় ভিটামিন সি-র এখনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে।
ভিটামিন সি আছে এমন ফলের বিক্রি বেড়েছে। পাতিলেবু, মুসুম্বি, আমলকী, আনারস, পেয়ারায় ভরপুর ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়াও টমেটো, ক্যাপসিকাম, কাঁচামরিচে ভিটামিন সি-র অভাব নেই।
ফল খাচ্ছেন। জল খাচ্ছেন রস চিপে। চায়ের কাপেও লেবুর ফোঁটা। ভিটামিন সি ট্যাবলেটের চাহিদাও তুঙ্গে। কিন্তু, যে ভিটামিন সি-এ ভরসা খুঁজছেন সকলে, সেই ভিটামিন সি কোভিড ঠেকাতে কতটা কার্যকর? এর উত্তরে চিকিৎসকরা বলছেন, সুষম আহার হিসেবে ভিটামিন-সি প্রয়োজনীয়। রান্নায় যেমন চাল-ডালের সঙ্গে লবণ-হলুদ জরুরি। তেমনই শরীরে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে চাই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস। করোনা প্রতিরোধে এইসব ফল ও আনাজের সরাসরি হিসেব না পাওয়া গেলেও এই খাবার দীর্ঘ সময় ধরে খাবারের লিস্টে থাকলে লাভবান হবে সকলেই।
শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন সি’র ভূমিকা অনেক। এছাড়া সাধারণ সর্দি-কাশিতেও ভিটামিন সি ভালো কাজ করে। সেইসঙ্গে ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সহায়তা করে ভিটামিন সি।
ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, টিউমার, ক্যানসারসহ নানা কঠিন অসুখের জন্য দায়ী ফ্রি-র‌্যাডিক্যাল, যা ফরমালিন ও কীটনাশকযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত তৈরি হয়। পাশাপাশি দূষিত পরিবেশে বসবাস, অনেক বেশি ফাস্টফুড খাওয়া, মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবন ইত্যাদি কারণেও শরীরে ফ্রি-র‌্যাডিক্যাল তৈরি হয়। ভিটামিন সি’র মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এসব ফ্রি-র‌্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমন করতে সহায়তা করে।
আমাদের শরীরের মাংসপেশী, হাড়, রক্তনালী, পরিপাকতন্ত্র ও ত্বকে রয়েছে কোলাজেন প্রোটিন। যা কোষের স্বাস্থ্য ও স্থিতিস্থাপকতা ঠিক রাখে। কিন্তু মানুষের বয়স হলে কোলাজেনের পরিমাণ কমতে থাকে। তাই ত্বক ঝুলে যেতে শুরু করে। এই কোলাজেন তৈরিতে ভূমিকা রাখে ভিটামিন সি।
ভিটামিন সি-এর অভাবে স্কার্ভি নামক রোগ দেখা দেয়। এ রোগের কারণে তাড়াতাড়ি না শুকানো, চুল ও দাঁত পড়া, কালশিটে দাগ পড়া ও জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে। এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে দৈনিক ১০ মিলিগ্রাম সমপরিমাণ ভিটামিন সি খাওয়া যথেষ্ট।