মহম্মদপুরে হিরণের আবিষ্কার ; প্লেন তৈরী করে আকাশে উড়িয়ে নজর কেড়েছে এলাকাবাসীর

মুরাদ হোসেন, মাগুরা প্রতিনিধি
মাগুরার মহম্মদপুরে খেলনা প্লেন তৈরী করে আকাশে উড়িয়ে এলাকাবাসীর নজর কেড়েছে লেখাপড়া না জানা এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলে মো. হিরণ। সে খেলনা হিসেবে জেটফাইটার বিমান ও প্লেন তৈরী করে আকাশে উড়িয়েছে এবং স্পীডবোট তৈরী করে পানিতে চালাতে সক্ষম হয়েছে। যার কন্ট্রোল করা হয় রিমোট দিয়ে। হিরণ উপজেলার বিনোদপুরের মোল্লাপাড়া এলাকার এক অসহায় দিনমজুর পরিবারের ছেলে। গতকাল সোমবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, অভাব অনটনের সংসারে থেকেও লেখাপড়ার পাশাপাশি অনেক স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠা আলো ঝলমলে সদা হাস্যোজ্জ্বল হিরণের। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে ২০১৩ সালে দিনমজুর পিতা আবুল খায়ের মারা যান। মা তাসলিমা বেগম ও দুই ভাইয়ের অভাবের সংসারের হাল ধরতে আর লেখাপড়া করতে পারেনি হিরণ। দুই ভাইয়ের মধ্যে হিরণ ছোট। সংসারের চাহিদা মেটাতে এবং দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জন্য শিশুকাল থেকেই ভ্যান চালানো, গ্যাস লাইট মেরামত ও গ্যাস ভরাসহ নানা ধরণের কাজ করতে হয়েছে। তার আয় ইনকামে বড় ভাই এসএসসি পাশ করে ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকুরি নিয়েছিল। করোনার কারণে বেকার হয়ে বাড়ী চলে এসেছে। হিরণের আয়ে এখন চলছে চার সদস্য পরিবারের সংসার। তবে তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে পিছিয়ে নেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের লেখাপড়া না জানা হিরণ। আঠারো বছর বয়সী আলো ঝলমলে সদা হাস্যোজ্জ্বল হিরণ, বিনোদপুর বাজারে এনামুলের মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টারে বেতনভুক্ত সামান্য একজন কর্মচারী। তার মাসিক বেতন ৪ হাজার টাকা। কিন্তু হিরণের তুখোড় মস্তিষ্ক থেমে থাকেনি কখনও। মেধাবী হিরণ মনের আনন্দেই খেলনা হিসেবেই তৈরী করেছে ৪২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ২৯ ইঞ্চি প্রস্থের দুইটা প্লেন, দুইটা জেটফাইটার বিমান ও দুইটা স্পীডবোট। খেলনা হলেও প্লেন ও বিমান আকাশে উড়তে সক্ষম। অনেক গতিতে চারিদিকে দুই কিলোমিটার ঘুরে আসতে পারে এই প্লেন ও বিমান এবং স্পীডবোটও পানিতে চলতে পারে। যার কন্ট্রোল করা হয় রিমোট দিয়ে। ব্যাটারীর চার্জ কমে গেলে একটা সংকেত দেয়, যার ফলে এটাকে হিরণ নামিয়ে আনতে পারে। খেলনা হিসেবে এলাকায় বিক্রয়ের জন্য তৈরী করলেও ব্যায়ভার বেশী হওয়ায় এটা সে বিক্রয় করতে পারেনি। আট থেকে দশ হাজার টাকা ব্যয় হয় প্লেন-বিমান বা স্পীডবোট এর একটি তৈরী করতে, যা দিনমজুর হিরণের পক্ষে সম্ভব না। তাই যদি ভালো কোনো পৃষ্ঠপোষকতা পায় তাহলে হিরণ এটাকে বানিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে পারতো বলে ধারণা সচেতন মহলের। বিনোদপুর চৌরাস্তা বাজার বণিক সমিতির সভাপতি হরশিৎ ঘোষ বলেন, হিরণের বাবা হাট-বাজারে গান গাওয়াসহ বিভিন্ন সময় নানা ধরণের কাজ করে সংসার চালাতো। হিরণ ও রনি লেখাপড়া করতো, ওদের মেধা ভালো ছিল। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে লেখাপড়া শিখতে পারেনি। তবে ভালো গাইড পেলে হয়তো হিরণ কিছু একটা করতে পারতো বলে সভাপতির ধারণা।