বগুড়ার বাজারে শীতের আগাম সবজি, রপ্তানি হবে বিদেশেও

বগুড়া প্রতিনিধি
উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত বগুড়া। এ জেলার কৃষকেরা বারো মাস বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে থাকেন। মৌসুমের আগে শীতের ফসল চাষ করে বাজারে তুলে লাভবান হচ্ছেন অনেক চাষী। পুরো ফসলগুলো উঠলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হবে বিদেশের বাজারে। আগাম চাষ করা শীতকালীন সবজিতে ভরে উঠেছে প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো বগুড়ার মহাস্থান হাট। তাই সবজির দামও কিছুটা চড়া। এ হাট থেকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক সবজি রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গার পাইকাররা হাট থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই হাটে এখন প্রতিদিন কেনাবেচা হচ্ছে প্রায় ৪ কোটি টাকার সবজি। শুধু দেশ নয় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হওয়া এসব সবজি ও উৎপাদিত ফসল দেশের বাহিরে চলতি বছরের ৩০ হাজার মেট্রিক টন বিষমুক্ত আলু নেপাল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, দুবাইসহ ৮টি দেশে রপ্তানি করা হয়।
কৃষিবিভাগের তথ্যমতে, এ বছর বগুড়া জেলায় ২৪ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে সারাবছর কৃষকেরা নানা ফসল ফলান। এর মধ্যে শুধু ১৮ হাজার ১৮৮ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ফলন ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৭ হাজার ৩৪৩ টন। শীতকালে ১২ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে এবার সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টন। জেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী উপজেলা ধুনট, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা বালু মাটিযুক্ত জমিতে উৎপাদিত কাঁচামরিচ দেশজুড়ে নাম কুড়িয়েছে। এখানকার লাল মরিচের ঝাল বেশি হওয়ায় প্রতি মৌসুমে দেশে মসলা বাজারজাতকারী বড় বড় প্রতিষ্ঠান বগুড়া থেকে মরিচ কিনে নিয়ে যায়। জেলার উত্তরের শিবগঞ্জ, সোনাতলা ও গাবতলী উপজেলায় অন্যান্য কৃষি ফসলের পাশাপাশি কলা ও আখ চাষাবাদ করে থাকেন এখানকার কৃষকেরা।
এছাড়াও জেলার প্রধান ফসল ধান, মরিচ, আলু, সরিষা, কলা, পাট, আখসহ বিভিন্ন শাক-সবজি। এছাড়া মৌসুমের আগেই জেলার বিভিন্ন মাঠে সারি সারি শিম গাছ, শোভা পাচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, বেগুন, মূলা, করলা, পটল, পালং ও লালশাকসহ হরেক রকমের শীতকালীন সবজির চারা। এসব শীতকালীন সবজি ইতোমধ্যে বাজারে তোলা শুরু হয়েছে। আগাম বাজারে উঠায় সবজির দামও ভালো পাচ্ছেন এখানকার কৃষকেরা।
শাজাহানপুর উপজেলার শাহনগর গ্রামের কৃষক সাইদুজ্জামান জানান, প্রতিবছরের মতো এ বছর ৪ বিঘা জমিতে আগাম সবজি চাষ করেছেন। সবজি চাষে তুলনামূলকভাবে মূলধনও কম লাগে। একটু বেশি পরিচর্যা করতে হয়। রোগবালাই দমনে সবজিতে কীটনাশক বেশি প্রয়োগ করতে হয়। খুব কম সময়েই বিক্রি উপযোগী হয়ে ওঠে। প্রায় দিনই বাজারে বিক্রি করা যায়। পরিবারের চাহিদাও মেটানো সম্ভব হয়। জমিতে সবজি থাকা পর্যন্ত প্রত্যেক কৃষকের হাতে কম-বেশি টাকা থাকে। যা অন্য ফসলের বেলায় সম্ভব নয়। এছাড়া চলতি মৌসুমে সবজির দামও বেশ ভালো।
গাবতলী উপজেলার কৃষক এরশাদ আলী জানান, বর্তমানে মূলা জমিতে লাগানো হচ্ছে। এরপর আলু লাগানো হবে। এরপর আবার মূলা হবে তারপর একই জমিতে করলা লাগানো হবে।
মহাস্থান হাটের চাষী আলহাজ্ব আজিজার রহমান জানান, উৎপাদন ভালো হয়েছে। চাহিদাও ভালো এবং বাজারে দামও পাচ্ছি।
আলীম উদ্দিন জানান, ফুলকপি প্রতি মণ ২২শ টাকা, করলা ১৪ শ, মূলা প্রতি মণ ১২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, জেলায় ২৪ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে সারাবছর এখানকার কৃষকেরা নানা ফসল চাষাবাদ করে থাকে। চলতি বছর বগুড়ায় আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে ২ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে। যা থেকে আগাম শীতকালীন প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যাবে। আগাম শীতকালীন সবজির চাষ আরো বাড়বে। গত বছর ৩ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আগাম সবজি চাষ করেছিলেন চাষিরা। তা থেকে গত বছর প্রায় ৫৪ হাজার মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া শীতের আগাম সবজি বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় সবজি চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। তাই এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং এখানকার উৎপাদিত সবজি রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে বিক্রি হচ্ছে।