নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম বুধবার নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ আট আসামিকে খালাস দিয়েছেন। রায়ে আদালত বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাই সব আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
২০০৭ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই মামলা দায়ের করে। অভিযোগে বলা হয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। তবে আদালত রায়ে উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল।
খালেদা জিয়া বর্তমানে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন। তার পক্ষে আদালতে হাজির হন তার আইনজীবী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন জিয়া। রায় ঘোষণার পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাওয়া গেছে। এই মামলাটি খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্যই দায়ের করা হয়েছিল।
খালাসপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসেন, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর মইনুল হক এবং নাইকো রিসোর্সেস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সাবেক প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। এদের মধ্যে কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, মীর মইনুল হক ও কাশেম শরীফ পলাতক রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম তেজগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করেন। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। গত বছর ১৯ মার্চ আদালত খালেদা জিয়াসহ আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলায় মোট ৬৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৯ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। রায় ঘোষণার আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আসামিপক্ষের আত্মপক্ষ শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য ১৯ ফেব্রুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করেন।
এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। রায়ের পর বিএনপি ও সমর্থকদের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেছে। তারা এ রায়কে ন্যায়বিচারের বিজয় হিসেবে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে, দুদকের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।