নিজস্ব প্রতিবেদক
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে আবারো সংশোধনীর জন্য আনা খসড়া বাস্তবায়িত হলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশ (নাসিব)। ক্ষুদ্র ও খুচরা ব্যবসায়ীদের জীবিকায় আঘাত হানে এমন কোনো নীতিমালা প্রণয়ন না করতে অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি। গত শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সংগঠনটির নেতারা।
মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাসিবের সভাপতি ও ইনফরমাল সেক্টর ইন্ডাস্ট্রি স্কিলস কাউন্সিলের (আইএসআইএসসি) চেয়ারম্যান মির্জা নূরুল গণী শোভন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
মির্জা নূরুল গণী শোভন বলেন, ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) এর অধিকতর সংশোধনীর লক্ষ্যে প্রস্তাবিত খসড়া আইনের কতিপয় ধারা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যা বাস্তবায়ন হলে সারাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দৈনন্দিন জীবন ও জীবিকা চরম হুমকির মুখে পড়বে। এমনিতেই করোনার ভয়াল থাবায় সারাদেশের ব্যবসায়ীদের মত প্রত্যন্ত ও প্রান্তিক পর্যায়ের অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দৈনন্দিন জীবন-যাপন ও জীবিকা মুখ থুবড়ে পড়েছিল এবং তাদের জন-জীবন ও পারিবারিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল। করোনা পরবর্তী সময়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন সেইসময় এ আইন সংশোধনীর প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে প্রান্তিক ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়বেন।
নাসিব সভাপতি আরো বলেন, সংশোধনীর খসড়ায় কিছু প্রস্তাব আনা হয়েছে, যেমন- বাধ্যতামূলক লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতীত তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করা, ভ্রাম্যমাণ দোকানে বা ফেরি করে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ, অন্যথায় জরিমানা, পাবলিক প্লেসের সংজ্ঞায় চায়ের দোকান অন্তর্ভূক্ত করা এবং ওই সকল স্থানে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন নিষিদ্ধ, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ, প্যাকেট ব্যতিত খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ, ধূমপানের নির্দিষ্ট এলাকা প্রথার বিলুপ্তিকরণ। খসড়ায় দেয়া এসব প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে।
মির্জা নূরুল গনী শোভন বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ১৫ লাখ প্রত্যন্ত ও প্রান্তিক পর্যায়ে নিম্ন আয়ের খুচরা বিক্রেতা আছেন যার অধিকাংশই প্রত্যন্ত অঞ্চলের অস্থায়ী কিংবা ভাসমান দোকানী হিসেবে পরিচিত। যাদের কোন নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। তাদের ব্যবসার পুঁজি খুবই নগন্য। তাদের পক্ষে সিগারেট বা তামাকজাত পণ্য বিক্রয়ের জন্য আলাদাভাবে লাইসেন্স গ্রহণ কোনভাবেই সম্ভব নয় কিংবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার মত আর্থিক সংগতি নেই। সুতরাং সংশোধিত এই ধারা বা আইন বাস্তবায়িত হলে এ বিপুল সংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
উল্লেখ্য, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) আবারো সংশোধনের প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি এর খসড়া জনমতের জন্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও দেয়া হয়েছে।