চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : শতভাগ বিদ্যুতায়িত ঘোষণা করলেও এখনও বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার উমারপুর ইউনিয়নে। এখানকার মানুষের একমাত্র ভরসা সোলার বাতি, মোমবাতি, হারিকেন ও কুপি বাতি। উপজেলার উমারপুর, বাঘুটিয়া ও খাষপুখুরিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বঞ্চিত লক্ষাধিক মানুষ। হারিকেন ও কুপির আলোয় চলছে তাদের জীবন। সরকার সারা বাংলাদেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার ঘোষণা করলেও চৌহালীর এ এলাকা এখনও বিদ্যুতের আওতায় আসেনি।
স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ দিয়ে উমারপুরকে আলোকিত করার জন্য দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, কৃষক, দিনমজুর জেলেসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি আজও। যমুনা নদীর একচরে মোবাইল টাওয়ার ও বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে, আরেক চরে মোবাইল ও বাতি জ্বলবে না তা হবে না, তা হবে না। এই বৈষম্য নিরসনে উমারপুরে দ্রুত বিদ্যুৎ সাপ্লাই ও মোবাইল টাওয়ার দিয়ে আলোকিত বৈষম্য নিরসন করার আহ্বান সচেতন মহলের। উমারপুরে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় রাতের বেলায় পড়ালেখা ও বাজারে দোকান ব্যবসায়ীদের অসুবিধাসহ জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত, অনলাইন, হাসপাতাল ও শিক্ষাঙ্গনে সরকারি কার্যক্রমে হিমশিম খেতে হচ্ছে। উমারপুরে উচ্চ বিদ্যালয়, দাখিল মাদরাসা, নিম্ন মাধ্যমিক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ চরে ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন মডেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১০টি বাজার, ডিজিটাল সেন্টার, ইউনিয়ন পরিষদ, বন্যা আশ্রয়ণ কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক এখনো বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত। এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরা সোলার, কুপি বাতি ও হারিকেনের আলোতে খুব কষ্ট করে পড়ালেখা করছে। এছাড়াও ব্যবসায়ীরা সোলার, হারিকেন ও মোমবাতির আলোতে বেচাকেনা করছেন। বাজারে দোকান ব্যবসায়ী বিদ্যুতের অভাবে দোকান, শপিং ও বাড়িতে ফ্রিজ চালাতে পারছেন না। এলাকাবাসী অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে।
দত্তকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সুরুজ বলেন, বিদ্যুতের অভাবে আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম করতে সমস্যা হচ্ছে। অফিসিয়াল যত কার্যক্রম উপজেলা সদরে গিয়ে করতে হয়। আমরা তাড়াতাড়ি বিদ্যুতের এই অবস্থার পরিবর্তন চাই।
রফিকুল ইসলাম মাস্টার বলেন, যমুনা নদীর চরাঞ্চল ঘোরজান ও স্থল ইউপিতে বিদ্যুতিক বাতি জ্বলছে, অথচ আমাদের উমারপুর চরে জ্বলে হারিকেন ও কুপি বাতি। মোবাইল টাওয়ার ও বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
আব্দুল কাদের বলেন, দাবি মোদের একটাই, উমারপুরে বিদ্যুৎ ও মোবাইল টাওয়ার চাই। শতভাগ শিক্ষা, জন্ম নিবন্ধন ও কোমলমতি শিশুদের পড়ালেখা সুবিধার্থে যমুনার চরাঞ্চলের বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন ও মোবাইল টাওয়ার স্থাপনে কর্তৃপক্ষের সুনজর প্রয়োজন।
উমারপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মন্ডল বলেন, ভাষা মতিনসহ গুণীজনদের জন্মস্থান উমারপুর। খ্যাতনামা এসব গুণীজনদের দিকে তাকিয়ে বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় ও মোবাইল টাওয়ার স্থাপনে সরকারের উপদেষ্টামন্ডলীদের সুনজর প্রত্যাশা করছি।
চৌবাড়িয়া কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম বলেন, উমারপুর ও বাঘুটিয়া ইউনিয়নে চরাঞ্চলে হাজার হাজার জনগণ বসবাস করে। এদের জন্য রয়েছে মডেল হাসপাতাল, বন্যা আশ্রয়ণ কেন্দ্র, হাট-বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিদ্যুতের অভাবে সেবা বঞ্চিত চরাঞ্চলের মানুষের সেবায় কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) শওকত মেহেদী সেতু বলেন, চৌহালী উপজেলার উমারপুর ইউনিয়নে দ্রুত বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় আনতে জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
