চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে মশা ও মাছিবাহিত ল্যাম্পি স্কিন রোগে প্রায় দেড় হাজার গরু আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় শতাধিক গরু মারা গেছে। ফলে শিবগঞ্জের শত শত গরু খামারী ও সাধারণ চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গ্রাম্য পশু চিকিৎসদের শরণাপন্ন হয়ে কাঙ্খিত চিকিৎসা মিলছে না বলে অভিযোগ করছেন গরু খামারীরা।
প্রতিদিন শিবগঞ্জ প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে গরু খামারী ও চাষীরা আক্রান্ত গরু নিয়ে ভীড় জমাচ্ছেন। প্রাণী সম্পদ অফিস কর্তৃপক্ষ বলছেন, গরু মারা যাওয়ার সংখ্যা কম। কিন্তু সরেজমিনে গরু খামারী ও চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর শিবগঞ্জে প্রায় দেড় হাজার গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে প্রায় শতাধিক। তবে, প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গরু মারা যাওয়ার কোন তথ্য দিতে পারছেন না। তাদের ভাষ্য হচ্ছে, এ ব্যাপারে কোন জরিপ না করায় সঠিক কোন তথ্য তাদের কাছে নেই।
সাম্প্রতিককালে মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের নুহ আলীর প্রায় ৮০ হাজার টাকা দামের একটি গরু, রহুর আমিনের এক লাখ টাকা মূল্যের একটি গরু, মুখলেছুর রহমানের এক লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু, বিদোনপুর ইউনিয়নের কবিরাজ টোলার অসিমের এক লাখ টাকা মূল্যের একটি গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এ রোগে সবচেয়ে বেশি গরু আক্রান্ত হয়েছে ও মারা গেছে দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নে।
এ ইউনিয়নের গ্রাম্য পশু চিকিৎসক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নে প্রায় এক’শ গরু আক্রান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নে কামালপুর গ্রামের বদিউরের একটি, মির্জাপুর গ্রামের রাকিবের একটি, ইংলিশ গ্রামের মফিজ উদ্দিনের একটি, মির্জাপুর গ্রামের আতাউর রহমানের একটিসহ প্রায় ৪০টি গরু মারা গেছে।
তিনি আরো বলেন, এ রোগ থেকে গরু রক্ষা করতে আক্রান্ত গরুকে অন্য গরু থেকে আলাদা রাখতে হবে। নিয়মিত ভ্যাকসিন দিতে হবে। বর্তমানে প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল থেকে দুইশত টাকা মূল্যের গোটফস নামে একটি ভ্যাকসিন দিচ্ছে। তারা বলেন, যা ব্যবহারে অনেক গরু ভাল হচ্ছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রাম্য পশু চিকিৎসক জানান, প্রাণিসম্পদ থেকে ঠিকমত ভ্যাকসিন সরবরাহ না দেয়ায় গরুর খামারী ও সাধারণ চাষীরা হিমশিম খাচ্ছে। প্রকৃত ভ্যাকসিন এখনো পাওয়া যায় না। তারা জানান, এ রোগটি মশা ও মাছিবাহিত রোগ। এ রোগের লক্ষণ হলো গরুর শরীরে গুঁটি গুঁটি আকারে ফোসকা উঠবে। জ্বর হবে। খাওয়া ছেড়ে দিবে। আস্তে আস্তে গরু মারা যাবে।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক গরু খামারী ও গরু পালনকারীরা জানান, গ্রাম্য পশু চিকিৎসকরা পশু চিকিৎসার ক্ষেত্রে ঔষধের দাম অনেক বেশি নিচ্ছে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। তারা আরো জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর ল্যাম্পি স্কিন রোগে অনেক বেশি গরু আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারাও যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. শাহাদাৎ হোসেন জানান, শিবগঞ্জে ল্যাম্পি স্কিন রোগে কোন গরু মারা গেছে কি না তা আমার জানা নেই। কারণ এখনো জরিপ করা হয়নি। তবে এ রোগ থেকে গরুকে রক্ষা করতে নিয়মিত ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, যদি কেউ ঔষধের দাম বেশি নেয় তাহলে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
