যশোর প্রতিনিধি : ইলিশ রপ্তানি নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যশোরের বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১৮০০ টাকা। আর ভারতে রপ্তানি হচ্ছে ১১৮০ টাকা দরে। ইলিশ নিয়ে যে ভেলকিবাজি চলছে তা কিভাবে সম্ভব! শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার থেকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়েছে। ওইদিন ২০টি ট্রাকে ৫৪ মেট্রিক টন ৪৬০কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়। গত শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ৪৫ মেট্রিক টন ২০০ কেজির মতো ইলিশ রপ্তানির গেট পাশ হয়েছে। এ নিয়ে গত দু’দিনে বেনাপোল দিয়ে ভারতে রপ্তানি হলো ৯৯ মেট্রিক টন ৬৬০ কেজি ইলিশ। প্রতি কেজি ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ১০ মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি ১১৮০ টাকা দরে। যশোরের নাভারন বাজারের মাছের আড়তে গত শনিবার পাইকারিতে প্রতি এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে হিসাবে একই আকারের ইলিশ প্রায় ৬২০ টাকা কমে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিদর্শক আসওয়াদুল আলম বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা দিতে পারবেন। তবে আমি যেটা জানি সেটা হলো, ইলিশ রপ্তানির পরিপত্রটি কয়েক বছর আগের। তখনকার বাজারদরের সঙ্গে মিল রেখে ১০ ডলারে প্রতি কেজির রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এখনো সেই পরিপত্র অনুযায়ীই রপ্তানি হচ্ছে। তবে ইলিশের দেশীয় বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দাম সমন্বয় হতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।
বাগআঁচড়া বাজার মৎস্য আড়তদার কুদ্দুস আলী বলেন, স্থানীয় বাজারে যেখানে প্রতি কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা বিক্রি হয়, সেখানে ভারতে ১০ ডলার বা ১ হাজার ১৮০ টাকা কেজিতে কীভাবে রপ্তানি হচ্ছে, তা বোঝা দায় হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে সবার মাঝে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এছাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ গতকাল ১৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।
এছাড়া সীমান্ত এলাকার একাধিক সূত্র জানায়, সীমান্ত পথে রাতের আঁধারে শত শত টন ইলিশ মাছ ভারতে পাচার হচ্ছে। এর ফলে দেশের বাজারে ইলিশ মাছের দাম কমছে না।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক রাশেদুল সজিব নাজির জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ২০টি ট্রাকে করে ৫৪ মেট্রিক টন ৪৬০ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। গত শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ১৫টি ট্রাকে ৪৫ মেট্রিক টন ২০০ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এ নিয়ে দু’দিনে ভারতে ইলিশ মাছ রপ্তানি হলো ৯৯ মেট্রিক টন ৬৬০ কেজি। দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে মোট ২ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন রয়েছে। তবে রপ্তানিকারকদের আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রথমে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তা থেকে সরে এসে ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছে ৪৯টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান ৫০ টন করে ২ হাজার ৪০০ টন এবং আরেকটি প্রতিষ্ঠান ২০ টন ইলিশ রপ্তানি করবে।
