মোঃ আব্দুল কুদ্দুস, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
নতুন পোশাক ছাড়া ঈদের আনন্দ কল্পনাই করা যায়না। আর সেই পোশাক যদি পাওয়া যায় টাকা ছাড়াই তাহলে বিষয়টি হয়ে যায় অন্যরকম। আর অন্যরকম এ ঘটনার অবতরণ ঘটেছে কুষ্টিয়ায়। ঈদকে সামনে রেখে টাকা ছাড়াই মিলছে পছন্দের ঈদ পোশাক। ঈদকে সামনে রেখে ধনী থেকে গরিব বাঙালির প্রতিটি ঘরে ঘরে কেনাকাটার ধুম লেগে যায়। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা সাধ ও সাধ্যের মধ্যে কিনে প্রতিটি সদস্যের নতুন পোশাক। কিন্তু মহামারী করোনায় ঈদের পোশাক কিনতে ধনীদের তেমন অসুবিধা না হলেও বিপাকে গরিব ও ছিন্নমূল মানুষেরা। করোনায় পর্যাপ্ত কাজ ও অর্থ না থাকায় অনিশ্চিত ঈদের নতুন পোশাক কেনা। তাদের কাছে অনেকটাই অনিশ্চিত ঈদের আনন্দ। সে কারণেই খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও ছিন্নমূল মানুষের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এক ভিন্নরকম দোকান খোলা হয়েছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায়। ঈদকে সামনে রেখে এমন ভিন্নরকম দোকান খুলেছেন তরুন ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী শাকিল আহমেদ তিয়াস। তিনি কুমারখালী ইয়াং কালেকশন, আর এন ফার্নিচার ও রাফা পাঞ্জাবী গার্মেন্টসের স্বত্ত্বাধিকারী। এ দোকানটি কুমারখালী গণমোড় সংলগ্ন কৃষিব্যাংকের নিচে মোবারক মার্কেটে অবস্থিত। আর দোকানটির নাম দেওয়া হয়েছে “ঈদ আনন্দ, মানুষের প্রতি ভালবাসা”। দোকানে শিশু থেকে সব বয়সী পাঁচশত পুরুষ মানুষের জন্য নতুন জামা, গেঞ্জি, পাঞ্জাবি ইত্যাদি পোশাক রাখা হয়েছে। এখান থেকে একজন ব্যক্তি পছন্দমত মাত্র একটি পোশাক টাকা ছাড়াই কিনতে পারবেন। পোশাকগুলো দেওয়া হচ্ছে রাফা পাঞ্জাবী’র সহযোগীতায়। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এ দোকানটির শুভ উদ্বোধন করেন তিয়াসের মা সুরাইয়া পারভীন। জানা যায়, করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেকে, দু-বেলা দুমুঠো ভাতের যোগান দেওয়াটাও তাদের কাছে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ঈদে নতুন পোশাক কেনাটা দুঃস্বপ্নের মত। কিন্তু নতুন পোশাক ছাড়া ঈদ জমেনা। এমন ধারণা থেকেই ঈদ আনন্দ, মানুষের প্রতি ভালবাসা নামের ভিন্নধর্মী দোকান খুলেছেন তরুন ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী শাকিল আহমেদ তিয়াস। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দোকানে আগতদের বিনয়ের সহিত স্বাগতম জানাচ্ছে কিছু স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী। এরপর আগতরা দোকানে থাকা ঈদের পাঞ্জাবী, টি-শার্ট, গেঞ্জি ইত্যাদি ঘুরে ফিরে দেখছেন। পছন্দ হলেই স্বেচ্ছাসেবীরা প্যাকেট করে দিচ্ছেন। স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তেমন কাজও নেই। তাই ভাল কাজে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন তারা। ভিন্নরকম এমন দোকানের উদ্যোক্তা শাকিল আহমেদ তিয়াস বলেন, নতুন পোশাক ছাড়াতো ঈদের আনন্দ হয়না। করোনায় কর্মহীন মানুষের পক্ষে পোশাক কেনা সম্ভব নয়। এছাড়াও মানুষ তার নিজ পছন্দের পোশাক পরতে ভালবাসে। তাই ভিন্নরকম এমন আয়োজন। মানুষ দোকানে আসবে, টাকা ছাড়াই এখান থেকে পছন্দের পোশাক কিনে বাড়ি ফিরবে। তিনি আরো বলেন, বিত্তবানদের উচিৎ, ছিন্নমূল মানুষের জন্য কিছু একটা করা। এ বিষয়ে তিয়াসের মা সুরাইয়া পারভীন বলেন, আমার ছেলে সবসময় মানুষের কথা ভাবে। মানুষের জন্য চিন্তা করে। আমারও ওর কার্যক্রমগুলো খুব ভাল লাগে। এমন ভিন্ন দোকান থেকে টাকা ছাড়াই পোশাক কেনা কয়েকজন নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, করোনায় কাজ নেই। নতুন পোশাক কেনার টাকা নেই। এখান থেকে পছন্দ করে পোশাক নিয়েছি। নতুন পোশাক পেয়ে খুব খুশি লাগছে।
