কাহারোলে ধানের অভাবে ১০৪টি চালকল ও চাতাল বন্ধ ; শ্রমিকের দুর্দিন

কাহারোল (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : কাহারোলে ধানের অভাবে ১৪৮টির মধ্যে ১০৪টি চালকল ও চাতাল বন্ধ থাকায় এই পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকদের এখন দুর্দিন। দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলায় ধানের অভাবে প্রায় ১০৪টি চালকল ও চাতাল বন্ধ থাকছে বছরের অর্ধেক সময়। ফলে এই পেশায় নিয়োজিত ১৫শত এর অধিক শ্রমিক কর্মচারী বেকার হয়ে অতিকষ্টে জীবন অতিবাহিত করছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। মিল চাতাল বন্ধ থাকার কারণে মিল মালিকদের বিপুল অংকের টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
চালকল মালিক সূত্রে জানা গেছে, ইরি-বোরো মৌসুম ও আমন মৌসুমে ধান কাটা শুরু হলে চালকলগুলোতে রাত-দিন চলে ধান সিদ্ধ করা, শুকানো ও ভাঙ্গানোর কাজ। এই সময় কাহারোল উপজেলা থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চাল পাঠানো হতো। বর্তমানে এখন চাল পাঠাতে পারছে না মালিকরা। কেননা আগের মতো পর্যাপ্ত ধান সরবরাহ নেই। আর যদিও বা ধান পাওয়া যায় তাহলে ধানের দাম বেশি পড়ে, লাভ তেমন একটা বেশি থাকে না। কাহারোল উপজেলার হাটবাজারগুলোতে বর্তমানে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১৩শত ২০ থেকে ১৩ হাজার টাকা দরে। দামের কারণে অনেক ব্যবসায়ী মিলচাতালের ব্যবসা বাদ দিয়ে অন্য ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। বর্তমানে মিলচাতালের ব্যবসায় লোকসানের দায়ে মিল চালকল ও চাতাল মালিকেরা অনেক মিল চাতাল বন্ধ করে অন্য ব্যবসায় ঝুঁকেছেন।
উপজেলা গড়েয়া হাট মিল চাতাল ব্যবসায়ী মোঃ সমশের আলী জানান, চালকল ও চাতালে লোকসান দিতে দিতে পুঁজি শেষ হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে চাতাল ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গড়েয়া হাটের রফিক হাসকিং মিলের চাতালে কাজ করা কর্মচারীদের মধ্যে স্বামী পরিত্যক্ত আকতারা জানান, আগে যে টাকা রোজগার হতো এখন তা হচ্ছে না। ৩ ছেলেমেয়েকে নিয়ে দিন চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অপরদিকে আব্দুর রহিম উদ্দীন জানান, তারা শুধু ধান সিদ্ধ করা, শুকানো ও ভাঙানোর কাজ করে থাকেন। তারা বলেন, আগে মিল চাতালে কাজ করে প্রতিদিন এক এক জনের আয় হতে ৩শত থেকে ৪শত টাকা। এছাড়াও চালের খুদ ও গুঁড়াও মিলতো। তা দিয়ে খাওয়া চলতো। কিন্তু এখন পেটের ভাত জোগাড় করা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে এ পেশা ছেড়ে শ্রমিকেরাও অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। চালকল ও চাতালের ব্যবসা এখন নেই বললেই চলে। কারণ ধানের দাম অনেক বেড়ে গেছে। চাহিদা অনুযায়ী ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ শাহীন রানা জানান, এই উপজেলায় ১৪৮টি মিলচাতাল ছিল। এখন আমাদের রেকর্ডপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় যে, ১৪৮টি হাসকিং মিলের মধ্যে ৪৪টি মিল ও চাতাল চালু অবস্থায় রয়েছে যা আমাদের খাদ্য বিভাগের সাথে প্রতি বছর চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকে।