আত্রাইয়ের মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের সমারোহ ; মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌচাষিরা

আত্রাই (নওগাঁ) থেকে
উত্তর জনপদের শস্যভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ের প্রতিটি মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠ। শীতের শিশির ভেজা সকালে কুয়াশার চাদরে ঘেরা বিস্তীর্ণ প্রতিটি মাঠ যেন হলুদ বর্ণে ঘেরা এক স্বপ্নীল পৃথিবী।
যেদিকে চোখ যায় শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁধালো বর্ণিল সমারোহ। মৌমাছির গুনগুন শব্দে সরিষা ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে পদার্পণের এ অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন মনোমুগ্ধকর এক মুহুর্ত।
ভোরের বিন্দু বিন্দু শিশির আর সকালের মিষ্টি রোদ ছুঁয়ে যায় সেই ফুলগুলোকে। ভালো ফলনের আশায় উপজেলার কৃষকেরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি কর্মকর্তারাও।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে আত্রাই উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ১০ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে। এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১ হাজার বক্সের মাধ্যমে সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মৌচাষি আমিরুল ইসলাম জানান, সরিষার জমিতে তারা দেড় মাস থাকবেন। এরপর কালোজিরা ও ধনিয়ার জমিতে মধু সংগ্রহ করতে যাবেন নড়াইল, গোপালগঞ্জ অথবা মাদারীপুরে। সেখান থেকে লিচুর মধু সংগ্রহে যাবেন পাবনার চাটমোহর অথবা দিনাজপুরে। সর্বশেষে যাবেন সুন্দরবনে। এভাবেই তারা বছর অবধি বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মৌবাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। তারা বছরে সাড়ে ৫ মাস মধু সংগ্রহ করেন। এসময় তাদেরকে মৌমাছির জন্য আলাদা কোনো খরচ করতে হয় না। যেহেতু ফুল থেকেই মধু সংগ্রহ করে তারা নিজেদের খাবার সংগ্রহ করতে পারছে। কিন্তু বাকি সাড়ে ৬ মাস মৌমাছিকে চিনি খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়।
মৌচাষি আমিরুল ইসলাম আরো বলেন, প্রতি সপ্তাহে এক একটি বক্স থেকে ৫ থেকে ৮ কেজি মধু পাওয়া যায়। এভাবে সকল বক্স থেকে সপ্তাহে ১০ থেকে ১২ মণ মধু সংগ্রহ করে থাকেন তারা।
এ ব্যাপারে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা কেরামত আলী বলেন, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন ১০ ভাগ বেড়ে যায়। তাই সরিষার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহ লাভজনক ব্যবসা। এতে মৌমাছি ব্যবসায়ী যেমন একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কেএম কাউছার হোসেন জানান, এবারে আত্রাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে বিগত বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণ সরিষা চাষ হয়েছে। যথাসময়ে জমি চাষযোগ্য হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সুযোগ বুঝে সরিষা চাষ করেছে। কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।