অযত্নে অবহেলায় অস্তিত্ব হারিয়ে স্কুলের খেলার মাঠ এখন জলাশয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পুরা ডি.সি (পুরা দূর্গাচরণ) উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই মাঠে প্রতি বছর জমজমাটভাবে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো, যেটা ছিলো টঙ্গীবাড়ী উপজেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় খেলার মাঠ। যা এখন একটি দীঘিতে পরিণত হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩৩ সালে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ অঞ্চলের মানুষের বিনোদনের ও খেলাধুলার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এ মাঠটি। কিন্তু গত কয়েকবছর যাবৎ সেই প্রাণবন্ত খেলার চিত্র আর দেখা যায়না। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠটি পানিতে ডুবে আছে। ৪ বছর আগে মাঠের চারপাশে বাঁধ দিয়ে উঁচু করে রাখলেও ভরাট কাজ করা হচ্ছেনা। সেখানে এখন ঘাস জন্মেছে। মাঠের পাশের সড়কটিতে পানি অপসারণের জন্য একটি ছোট কালভার্ট রয়েছে। কিন্তু সেটি বন্ধ থাকায় পানি সরতে পারছেনা। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয়রা বলেন, এই মাঠে প্রতিদিন ক্রিকেট, ফুটবল খেলায় মজে থাকতো পাড়া, মহল্লার কিশোর-কিশোরী, যুবক এমনকি বৃদ্ধরাও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই মাঠে খেলোয়াড়দের আনাগোনা, হৈ-হুল্লোড় দেখা যেত। বিকাল হলেই কিশোর থেকে শুরু করে যুবক ও বয়স্কদের দেখা যেত ফুটবল খেলার আসর জমাতে। মাঠের উপরিভাগে রাস্তায় ভিড় জমিয়ে খেলা উপভোগ করতো দর্শনার্থীরা। প্রতিদিন খেলার মাঠের চারপাশে বসতো বিভিন্ন রকমের ভাসমান দোকান। সেই মাঠ বিগত কয়েক বছর যাবত অবহেলায় অযত্নে পড়ে আছে। মাঠটি মেইন রাস্তা থেকে সাত-আট ফুট নিচু হওয়ায় বর্ষার পানিতে ডুবে যেত। তাই রাস্তার সমান ভরাট করার জন্য চারপাশ বেঁধে রাখলেও এর সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে না। যার ফলে বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী। খেলার মাঠ না থাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এতে করে অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারে মোবাইলের রেডিয়েশনের কারণে চোখে এবং ব্রেইনে আঘাত হানছে উঠতি বয়সী তরুণ- তরুণীদের।
স্থানীয় ও শিক্ষার্থীদের দাবি, মাঠের পানি অন্যত্র সরিয়ে অন্তত পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারলে শিক্ষার্থীরা বিনোদনের জন্য খেলার মাঠটি ফিরে পেতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন মৃধা বলেন, আমরা যখন বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়া করতাম তখন এই মাঠটি সকাল সন্ধ্যা সরগরম থাকতো। পড়ার ফাঁকে যে সময়টুকু পেতাম এই মাঠে খেলাধুলা করতাম। কিন্তু বর্তমানে খেলাধুলার জায়গা না থাকায় ছেলে-মেয়েরা মোবাইল ফোনে বেশি আসক্ত হচ্ছে। যা তাদের মেধা বিকাশে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র শান্ত হালদার জানান, স্কুলের মাঠে প্রতি বৃহস্পতিবার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে খেলার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হতো এবং স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে টিম গঠন করে খেলার আয়োজন করা হত। গত কয়েক বছর যাবত সেই আনন্দ উপভোগ করতে পারছেনা এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
যশলং ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাঈল হোসেন বাবু খাঁন বলেন, স্কুল কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি। নতুন কমিটি গঠন করা হলে মাঠের কাজ ধরা হবে। বর্তমানে ৩ সদস্যের এডহক কমিটির মাধ্যমে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
পুরা ডি সি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুল ইসলাম জানান, মাঠের চারপাশ বাঁধাই করা হয়েছে। মাঠটি ভরে রাস্তা পরিমাণ উঁচু করা হবে যাতে করে সারাবছর স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী খেলাধুলা করতে পারে। কিছুদিনের মধ্যে স্কুলের নতুন কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি গঠন করার পরে খেলার মাঠের কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খালেদা পারভীন বলেন, স্কুলের কমিটি না থাকায় মাঠের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেনা। নতুন কমিটি হওয়ার আগ পর্যন্ত মাঠের কোনো কাজ করা সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি।